পরশুরাম প্রতিনিধি: “মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ি” লাল কালি দিয়ে ও মোটা কাগজে লিখে ফেনীর পরশুরামের এক মাদক কারবারির বাড়িতে এমন একটি সাইনবোর্ড দিয়েছে বিজিবি। এমন লেখার বিষয়ে বিজিবি সূত্র জানায়, জায়লস্কর ৪ বিজিবির ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে মাদক ব্যবসাকে নিরুৎসাহিত ও মাদক বিক্রেতাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে এটি লেখা হয়েছে। এর মাধ্যমে ফেনীর মাদক কারবারিদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যারা ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত তাদের বাড়ির নামকরণ ‘ইয়াবা ব্যবসায়ীর বাড়ি’ ও যারা মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত তাদের বাড়ির নামকরণ ‘মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ী’ লেখা হবে।
বিজিবি সূত্র আরো জানায়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর পরশুরাম উপজেলার দুবলারচাঁদ নামক এলাকা থেকে ২০ পিস ইয়াবা এবং তিন বোতল ভারতীয় ফেনসিডিলসহ পরশুরাম বিজিবির সীমান্ত চৌকির (বিওপি) টহল দল জসিম উদ্দিন (৩৫) নামে এক মাদক বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করে। বিজিবি কর্তৃক মাদকদ্রব্য আইনে মামলা দায়েরের পর আসামীকে আদালত হয়ে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। তার বাড়ি ফেনীর পরশুরাম উপজেলার বাউরখুমা গ্রামে। ঐ বাড়িকেই মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ি বলে এই প্রথম চিহ্নিত করা হয়েছে। এদিকে মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ি লেখায় এলাকায় জসিমের পরিবার প্রায় একঘরে হয়ে পড়েছে। তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করা হচ্ছে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা লজ্জায় বাড়িঘর থেকে বের হতে পারছে না।
বিজিবির এমন পদক্ষেপকে অনেকেই সাধুবাদ জানালেও বিশিষ্টজনরা এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ফেনী জেলা প্রশাসনের সাবেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা এ বিষয়ে তার ফেসবুকে লিখেছেন, “মাদক ব্যবসায়ীদের পাবলিক শেমিং এর মাধ্যমে নিরুৎসাহিত করার জন্য ” এটা ইয়াবা/মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ি” নামে একটা সাইনবোর্ড দেখলাম। যমুনা টিভিসহ কিছু পপুলার মিডিয়া বলছে এটি বিজিবির উদ্যোগ। এই পলিসির কিছু উপকার থাকলেও এর একটা সিরিয়াস ত্রুটি আছে। ফলে এটি আদালতে চ্যালেঞ্জড হবে নিশ্চিতভাবেই।
ত্রুটির কারণ, একটা বাড়ির মধ্যে মাদক ব্যবসায়ী ছাড়াও তার স্ত্রী, সন্তান, বাবা, মা, ভাই-বোন থাকতে পারেন। তারা ইনোসেন্ট হতে পারেন। আপনি পুরো বাড়িকে ” মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ি” হিসেবে ল্যাবেলিং করলে এটা ইনোসেন্ট মানুষদের জন্য অস্বস্তিকর ও তাদের জীবনধারণে ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে। এটি একজনের অপরাধে আরেকজনকে শাস্তি দেওয়ার শামিল যা বিচারের মূলনীতির লঙ্ঘন। উন্নত বিশ্বের যেকোন দেশে এই পলিসি ভয়াবহ আইনগত চ্যালেঞ্জের স্বীকার হতো। কারণ, অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনা যেমন সরকারের ম্যান্ডেট, ইনোসেন্ট মানুষকে প্রটেক্ট করাও সরকারের ম্যান্ডেট।”
ফেনী ৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো. নাহিদুজ্জামান বিজিবি কর্তৃক মাদক ব্যবসায়ীদের বাড়ি চিহ্নিতকরণ ও বাড়ির সামনে ব্যানারে লিখে চিহ্নিত করার সত্যতা নিশ্চিত করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরশুরামের এক জনপ্রতিনিধি বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় এটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে একটি বাড়িতে এমন সাইনবোর্ড দেবার পর পুরো বাড়ির মানুষ সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হবে। যা দেশের প্রচলিত আইন ও মানবাধিকার বিরোধী।
Leave a Reply